স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে বাঁচাতে স্বামীর করণীয়

স্বামীকে পরকীয়া থেকে বাঁচানোর কৌশল নারীদের শিক্ষা দেয়া নিয়ে অনেক লেখালেখি হয় বিভন্ন পত্র পত্রিকায় । কিন্তু স্ত্রীকেও যে পরকীয়া থেকে বাঁচান...

porokiaস্বামীকে পরকীয়া থেকে বাঁচানোর কৌশল নারীদের শিক্ষা দেয়া নিয়ে অনেক লেখালেখি হয় বিভন্ন পত্র পত্রিকায় । কিন্তু স্ত্রীকেও যে পরকীয়া থেকে বাঁচানোর কৌশল পুরুষদের জানা দরকার সে বিষয়ে কেউ কথায় বলে না । যেন এই কৌশল সেখার কোন দরকারই নেই পুরুষদের !
স্ত্রী পরকীয়ায় আসক্ত; এমন খবর যে কোন স্বামী জানতে পারলে প্রচণ্ড হতাশ ও রেগে যাবেন, এটাই স্বাভাবিক । পরকীয়ায় আসক্ত স্ত্রীর স্বামীকে হয়তো অনেকেই পরামর্শ দিবেন, “এই স্ত্রী রাইখা লাভ কি? দে তালাক । নতুন আর একটা ভাল মেয়ে বিয়ে করে ভালো করে সংসার কর ।” কিন্তু আসলেই কি এটা কোন সমাধান হল? ছেলে বাবা না হয়ে থাকলে এই সমাধান সহজে মেনে নেয়া যায় কিন্তু যদি সেই স্বামী সন্তানের বাবা হয়ে থাকেন? তাহলে কি স্ত্রীকে তালাক দিলেই সমাধান হয়ে যায়? পরকীয়ায় আসক্ত একজন স্বামীর স্ত্রী যদি সন্তান ও সংসারের মুখ চেয়ে স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে সংসার করতে পারে বছরের পর বছর এই আশায় যে বয়স বাড়লে ভাল হয়ে যাবে । তাহলে শুধুমাত্র পুরুষ হবার জন্য কেন আপনি পারবেন না এমন স্ত্রীর সাথে সংসার করতে । তবে হা স্ত্রী যাতে পরকীয়ায় আসক্ত না থাকে এবং সে যেন আবার পবিত্র দাম্পত্য জীবনে ফিরে আসে শুধু আপনি ছাড়া আর কারও সংস্পর্শে না যায় দৈহিক ও মানসিক চাহিদার তাগিদে তা খেয়াল করুন এবং এমন স্ত্রীকে এই দশা থেকে ফেরাতে চেষ্টা করুন । সেজন্য আপনার করণীয়-
১) স্ত্রীকে বেশী বেশী ভালবাসুনঃ স্ত্রীকে অনেক অনেক বেশী ভালবাসুন । শুধু মনে মনে এমনভাবে ভালোবেসে যাবেন না যে স্ত্রী বুঝেই না যে আপনি তাকে ভালোবাসেন । আপনার আচরণ, কথা সব কিছুতেই যেন ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে । কারণ অনেক স্বামী এমন আছে যে মুখে বলে ভালোবাসে স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসে; কিন্তু কাজের সময় দেকাহ যায় যে স্ত্রীকে ধুমকি-ধামকির মধ্যে রাখে, বিনা কারণে তাকে বকা-ঝকা করে, তার কথার কোন মূল্যায়ন করে না । আবার অনেক স্বামী এমন আছে যে স্ত্রীকে শুধু মনে মনে বোকার মতোই ভালোবেসে গেল । এতোটাই লাজুক ও অন্তর্মুখী স্বভাবের যে স্ত্রী বুঝেই না তরা স্বামী আদৌ তাকে ভালোবাসে কি না?  কাজেই স্ত্রীকে সত্যিকার অর্থে ভালবাসুন এবং সেটা স্ত্রীকে বুঝার সুযোগ করে দিন ।
২) স্ত্রীকে সময় দিনঃ অধিকাংশ পুরুষ নিজের চাকুরী, ক্যারিয়ার বা ব্যবসা নিয়ে এতো ব্যস্ত হয়ে পরে যে স্ত্রীকে একটু সময় দেয়ার মতো সময় তার হাতে নেই । সারাদিন বাসার বাইরে থাকার পর রাতে একটু বাসায় ফেরার পর দেখা যায় স্ত্রী- সন্তানকে সময় দেয়া কি স্ত্রী সন্তান একটু কাছে ঘেঁষে একটু সময় একটু ভালোবাসা সুলভ আচরণ প্রত্যাশা করলে সেটাকে বাড়াবাড়ি ভেবে বসেন । স্ত্রীর আঁচলের নিচে সময় কাটানোর সময় তার হাতে নেই । এমনটাও অনেকে সদর্পে বলে থাকেন ।
৩) স্ত্রীর চাওয়া- পাওয়ার মূল্যায়ন করুনঃ প্রেমিকা হিসাবে একটা মেয়ে একজন প্রেমিকের কাছে যেমন মূল্যায়ন পায় । স্ত্রী হিসাবে কিন্তু স্বামীর কাছ থেকে অধিকাংশ স্ত্রী সেরকম মূল্যায়ন এবং মর্যাদা পায় না । এমনকি বিয়ের আগে যে পুরুষ প্রেমিক ছিল তার সাথে বিয়ের পর সেই পুরুষও কিন্তু স্বামী হিসাবে পূর্বের প্রেমিকা যে এখন স্ত্রী তাকে সেভাবে মূল্যায়ন বা মর্যাদা করে না । তাই তো প্রমের বিয়ে অনেক ক্ষেত্রে সেভাবে টিকে না । হয়তো    পুরুষের স্বেচ্ছাচারিতা বা বিয়ের পরে বদলে যাওয়া আচরণের কারণে ।  তাই স্ত্রীকে পরকীয়া থেকে বাঁচাতেই শুধু না সুন্দর, সুষ্ঠু দাম্পত্য জীবন এবং শান্তিপূর্ণ সংসার পেতে স্ত্রীর চাহিদার মূল্যায়ন করুন । ইংরেজিতে একটা কথা আছে
“Wife is cute
When she is mute;
Husband is Honey
When she gives money. ”
তাই বলে টাকা দিয়েই স্ত্রী সব চাহিদার জোগান দেয়া কিন্তু সম্ভব না । টাকায় স্বল্পতা থাকলেও স্ত্রীর অন্যান্য চাহিদা যেমন বাইরে একটু ঘুরতে যেতে চায় । ছুটির দিনে তাকে ঘুরতে নিলেন । বা বাবার বাসায় বা বোনের বাসায় বেড়াতে যেতে চায় দুই একদিনের জন্য । ঐ দু-একদিন আপানর খাওয়া দাওয়ার কষ্ট হবে বলে তাকে যেতে দিলেন না । কি এমন বাসায় খান আপনি দুপুরে তো লাঞ্চ করেন না , রাতে এসে একবার আর সকালে দৌড়ের উপর অফিস ইউনিফর্মে দু-একটা রুটি । আসলেই কি স্ত্রী দুই-একদিনের জন্য বাবার বাড়ি বেড়াতে গেলে আপনার খাওয়া-দাওয়ার অনেক কষ্ট হবে? আপনি তো চাইলে দুই-একদিন হোটেলে খেতে পারেন রাতের খাবার ।
৪) স্ত্রীর গতিবিধির উপর খেয়াল রাখুনঃ স্ত্রীর গতিবিধির উপর খেয়াল রাখবেন মানে এমন না যে সারাক্ষণ তার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করবেন । তার সব কিছুতে সন্দেহের দৃষ্টি ছুঁড়বেন , বরং তা না করে স্ত্রী কোথায় যায়? কার সাথে মেশে? আপনার বাসায় কে আসে? এসব বিষয়ে কৌশলে খবর রাখুন তাহলে দেখবেন স্ত্রী পরকীয়ায় জড়ানোর আগেই তাকে সে জঘন্য বিষয় থেকে ফেরাতে পারবেন । পুরুষ বলে কি  রবীন্দ্রনাথের শাস্তি গল্পের নায়কের মতো এমন আচরণ করবেন বা এমন কথা বলবেন
“স্ত্রী গেলে স্ত্রী পামু…।”
ভেঙ্গে যাওয়ার পথে এমন সম্পর্ককেও একজন নারী তার স্বভাব সুলভ ধৈর্যের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে পারে তাহলে শুধু পুরুষ হবার কারণে নিজের ইগো ও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের কারণে কেন নিজের সংসার ভাঙ্গতে দিবেন? স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়লে সেই স্ত্রীকে তালাক দিলেই কি সমাধান হয়ে যায় । তার রেখে যাওয়া সন্তান ব্রোকেন ফ্যামিলিতে বড় হলে আদৌ কি তারা সেভাবে ভাল পরিবেশ পাবে? একজন নারী শুধুমাত্র সন্তানের কথা ভেবে নিজের হাজার কষ্ট হলেও এমনকি পরকীয়ায় আসক্ত স্বামীর নির্যাতন, মারধর সহ্য করে সংসার করে যায় বছরের পর বছর তাহলে আপনি শুধুমাত্র পুরুষ হবার কারণে কেন স্ত্রীকে এপথ থেকে ফেরানোর চেষ্টা বা সে পথে না যাবার ব্যবস্থা করবেন না ? বাবা হিসাবে কি আপনার দায়িত্ব নেই সন্তানের বাবা-মার বন্ধনে জড়িয়ে রাকাহ্র ব্যাপারে?
৫) তার সাথে খোলামেলা আলোচনা করুনঃ যদি আপনি বুঝতে পারেন কোন ছেলে হোক সেটা আপনার বন্ধু বা প্রতিবেশী আপানর স্ত্রী প্রতি দুর্বল বা আপনার স্ত্রী তার প্রতি দুর্বল তাহলে এটা চেপে না রেখে স্ত্রীর সাথে খোলামেলা কথা বলুন । এবং বাজে কিছু যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে তাকে সাবধান করে দিন । বা যদি স্ত্রী পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে যায়ও এ নিয়ে তার সাথে খোলামেলা কথা বলুন । তাকে দ্রুত ফেরান । হোক সেটা মৃদু শাসন বা ভালোবাসার মাধ্যমে ।
৬) তাকে শালীনতার শিক্ষা দিনঃ অনেক স্বামীই আছে দেখা যায় বিয়ের পর নতুন বউকে অকারণে যখন তখন নিজের বন্ধু, কাজিন যেমন মামাতো ভাই, খালাতো ভাই, নিজের ভাই এদের কাছাকাছি ঠেলে দেয় । স্ত্রীর আপত্তি থাকার সত্ত্বেও যখন তখন নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বাসায় আশার পরিবেশ তৈরি করে দেয় । এমনকি নিজের অনুপস্তিতিতেও ।  প্রথম প্রথম অনেক স্বামী ও তার পরিবার একটু মেশার জন্যই পীড়াপীড়ি করে । ভাবে এটুকু মেশায় কি এমন ক্ষতি । বরং বউ সোশ্যাল হয়ে উঠবে । যেসব শালীন মেয়ে ধর্মীয় বা স্বভাবগত কারণেই স্বামীর এমন বন্ধু ও কাজিনের সাথে মিশতে চায়না তাদেরকে  কোন কোন স্বামী বা তার পরিবার আন কালচারড, আন সোশ্যাল বলে আখ্যায়িত করে । স্ত্রীকে নিজের বন্ধু, কাজিন, প্রতিবেশী পুরুষ, তার এক্স বয়ফ্রেন্ড (যদি বিয়ের আগে তার কোন প্রেমিক থেকে থাকে) থেকে দূরে রাখুন । আর তাদের সামনে যদি বিশেষ প্রয়োজনে যেতেও হয় তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই শালীনভাবে উপস্থাপিত হতে সহায়তা করুন । কারণ সাধারণত স্ত্রীদের পরকীয়া দূরের, রাস্তার কারও সাথে হয় না । উপরে উল্লেখিত শ্রেণীর পুরুষদের সাথে হবার সম্ভাবনাই বেশী ।
৭) স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণ করুনঃ অনেকেই হয়তো এমন কথায় হেসে উঠবেন স্ত্রীর যৌন চাহিদা পূরণ করুন । এ আবার কি কথা? নিজের যৌন চাহিদা পূরণ করার সময়ই তো স্ত্রীর চাহিদাও পূরণ হবার কথা । কিন্তু দিব্য দৃষ্টিতে তাই মনে হলেও বিষয়টার সমাধান কিন্তু এমন সজা-সাপটা কথায় দেয়া সম্ভব না । বাংলাদেশী নারীরা সাধারণত লাজুক প্রকৃতির তাই নিজের চাহিদা মিটে কি না? বা মিটাতে চাইলেও সেটা কিভাবে মেটাবে স্বামী সেটা তারা হয়তো লজ্জায় বলতে চায়না । স্বামী যখন যেচে নিজের চাহিদা মিটাতে স্ত্রীর কাছে আসে তখনই কেবল স্ত্রী চাহিদা মেটানোর আশা রাখে । নিজে থেকে খুব কম স্ত্রী স্বামীর প্রতি যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এগিয়ে যায় । আর যেহেতু নারী নিজের চাহিদা সেভাবে দেকাহ্য না তাই স্বামীও সেভাবে কোন সিস্টেম ফলো না করে স্ত্রীর দেহ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের চাহিদা পূরণ করে নেয় । সে সময় স্ত্রীর চাহিদা পূরণে অপূর্ণতা থাকলো কি না? বা স্ত্রীর চাহিদা পূরণ না হলেও তার চাহিদা কিভাবে পূরণ করা সম্ভব এই দিক টা বিবেচনায় নেয় না । কাজেই নিজের যৌন চাহিদা পূরণের সময় স্ত্রীর যৌন চাহিদাও সম্পূর্ণ রূপে পূরণ করার চেষ্টা করুন । না করতে পারলেও আপনি যে চেষ্টা করছেন আপনি যে তাকে অনেক ভালোবাসেন সেটা স্ত্রীকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিন । দেখবেন দৈহিক চাহিদার অপূর্ণতা থাকলেও আপনার অকৃতিম ভালোবাসার কারণেই পরকীয়ায় আসক্ত হবে না বা আসক্ত হলেও ফিরে আসবে আপনার ভালোবাসা, সন্তান ও সংসারের প্রতি খেয়াল রেখে ।
পরিশেষে বলতে চাই যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক প্রেম-ভালবাসা ও বোঝা পড়ার সম্পর্ক । কাজেই  বিয়ের মাধ্যমে বন্ধনে আটকে গেছে বলেই যে এটা কাঁঠালের আঠার মতো আটকে রাখবে ভালোবাসার বন্ধন সারাক্ষণ এমন ভাবা বোকামি । একবার বিয়ে করেই এই সম্পর্ককে শুধু ছেড়ে দিলেই হবে স্রোতের দিকে ।বরং একে লালন করতে হবে উভয়কেই ।

Related

Boys World 4108117059173038258

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রিয় পাঠক! যদি পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে, অথবা পোস্টটিতে আপনার সমস্যা থেকে থাকে তবে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করার অনুরোধ করছি । কারন আপনার একটি ভালো মন্তব্য লেখককে আরো ভালো পোস্ট লেখার অনুপ্রেরণা যোগাবে। আশাকরি এমন কোন মন্তব্য করবেন না, যা পড়লে লেখকের কাছে খারাপ লাগতে পারে । সাথেই থাকুন ধন্যবাদ....

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷

emo-but-icon
:noprob:
:smile:
:shy:
:trope:
:sneered:
:happy:
:escort:
:rapt:
:love:
:heart:
:angry:
:hate:
:sad:
:sigh:
:disappointed:
:cry:
:fear:
:surprise:
:unbelieve:
:shit:
:like:
:dislike:
:clap:
:cuff:
:fist:
:ok:
:file:
:link:
:place:
:contact:

পেজে লাইক দিন l

ভিজিট করেছেন

549,935
item