কুমিল্লাকে জেতালেন ‘ব্যাটসম্যান’ মাশরাফি

—ব্যাট করে ম্যাচ জিতিয়ে কেমন লাগল? মাশরাফি বিন মুর্তজা: দৌড় দেখেই তো বুঝেছেন... এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও কথা বলেছেন। তবে অত কথার দরকার...

—ব্যাট করে ম্যাচ জিতিয়ে কেমন লাগল?
মাশরাফি বিন মুর্তজা: দৌড় দেখেই তো বুঝেছেন...
এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও কথা বলেছেন। তবে অত কথার দরকার নেই, মাশরাফির হাসির ঝিলিকেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল আনন্দের তীব্রতা। মোহাম্মদ আমিরের বলটা ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট দিয়ে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েই দিলেন দৌড়। ব্যাট ছুড়ে ফেললেন হাত থেকে। মাঠের মাঝখানে একটা চক্কর দিয়ে ছুটলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ড্রেসিংরুমের দিকে। অধিনায়ককে ঘিরে উৎসবের আনন্দ উপচে পড়তে লাগল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে।
এমন নয় যে ম্যাচের নিষ্পত্তি শেষ বলে হয়েছে বা তাতে ভর করেছিল ও রকম অন্য কোনো উত্তেজনা। চিটাগং ভাইকিংসের ১৭৬ রানের জবাবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে ৭ বল বাকি থাকতে। মাশরাফির অমন বুনো উল্লাসে মাতার তাহলে কী কারণ?
এই একটা জয়ের ভেতরই যে লুকিয়ে মাশরাফির অনেক জয়! একে তো বিপিএলে কালই তাঁর দল প্রথম জিতল, তার ওপর জয়টা এসেছে ‘ব্যাটসম্যান’ মাশরাফির হাত ধরে। আইকন খেলোয়াড় হিসেবে সাকিব আল হাসানের মতো অলরাউন্ডারকে না পেয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের আফসোস ছিল। মাশরাফির ম্যাচ জেতানো ইনিংস নিশ্চয়ই দূর করে দিয়েছে সে অতৃপ্তিও। জাতীয় দলের অনুশীলনে ইদানীং ব্যাটিং প্র্যাকটিস করছেন সিরিয়াস ব্যাটসম্যানের মতো। সেটার লিটমাস টেস্টেও পেলেন লেটার মার্কস। অন্য জয়টা তামিমের বিপক্ষে। তবে সেটা প্রতিপক্ষের অধিনায়ক তামিম নন, জাতীয় দলের বন্ধু সমতুল্য সতীর্থ তামিম।
টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত মাত্র একটা জয় পেলেও তিন ম্যাচেই প্রথমে ব্যাট করে প্রতিপক্ষের সামনে বড় লক্ষ্য দিয়েছে তামিমের চিটাগং ভাইকিংস। কালও সঙ্গী ওপেনার দিলশানের সঙ্গে অধিনায়কের ৬৩ রানের জুটির ওপর দাঁড়িয়ে ১৭৬ করে ফেলল চিটাগং। আগের ম্যাচে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ব্যাটসম্যানদের যা পারফরম্যান্স ছিল, তাতে তারা চিটাগংয়ের এই রান তাড়া করতে পারবে বলে মনে হচ্ছিল না কারোরই।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ব্যাটিংয়ের শুরুতে বিশ্বাসটা আরও জোরালো হলো। ৫৪ রানে ৩ উইকেট পড়ার পর নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান বলতে ছিলেন শুধু মারলন স্যামুয়েলস। আমির-তাসকিন-শফিউলদের সামনে একা কতটাই বা করতে পারবেন তিনি?
না, স্যামুয়েলস একা ছিলেন না। ছিলেন মাশরাফিও। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৮ নম্বর থেকে উঠে এসে ৫ নম্বরে ব্যাট করতে নামলেন অধিনায়ক। চতুর্থ উইকেটে স্যামুয়েলসের সঙ্গে তাঁর জুটিটা আর ভাঙলই না। ৫২ বলে ৬৯ করে রানের হিসাবে মূল অবদানটা স্যামুয়েলস রাখলেও সাহসী অধিনায়কত্ব আর বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ মাশরাফিই। অধিনায়কোচিত সাহস দেখানোর উদাহরণ অবশ্য আগেও ছিল তাঁর। তবু কালকেরটা একটু ওপরের দিকেই থাকবে।
ম্যাচ শেষে মাশরাফি বলেছেন, স্যামুয়েলসকে শট খেলার সুযোগ দিতে এবং চিটাগং ভাইকিংসের স্বাভাবিক চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটাতেই নাকি তাঁর আগে নামার সিদ্ধান্ত। বাস্তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের অসাধারণ জয়ে তাঁর ব্যাটিংয়ের প্রত্যক্ষ ভূমিকাই ছিল। ৩২ বলে অপরাজিত ৫৬ রানে একবারের জন্যও মনে হয়নি মাশরাফির আসল পরিচয় ব্যাটসম্যান নয়, বোলার। তিন ছক্কার দুটো সাঈদ আজমলের পরপর দুই ওভারে। বাউন্ডারি চারটা। তাসকিনের বলে যেভাবে স্লাইড করে থার্ড ম্যান দিয়ে একটা চার মারলেন, মনে হলো শটটা বুঝি নিয়মিতই আসে মাশরাফির ব্যাট থেকে।
আমিরের ফুল টসে জয়সূচক বাউন্ডারিটাও মাশরাফির। তামিমের সঙ্গে অন্য লড়াইটা জিতলেন এখানেই। বিপিএল শুরুর আগের দিন এক আড্ডায় কুমিল্লা অধিনায়ককে ভয় দেখিয়ে তামিম বলেছিলেন, কুমিল্লার সঙ্গে ম্যাচে মাশরাফি ব্যাটিংয়ে এলেই নাকি আমিরকে বোলিংয়ে আনবেন। মাশরাফির পাল্টা হুংকার ছিল, আমিরের প্রতিটা বলই পাঠাবেন মাঠের বাইরে। সেটা না পারলেও পাকিস্তানের এই পেসার মোটেও ভয় ধরাতে পারেননি কুমিল্লার অধিনায়কের মনে। আমিরের ৫ বলে ১০ রান নিয়েছেন মাশরাফি।
জাতীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে দুর্দান্ত সময় কাটানো এই ‘বিস্ময়-পুরুষ’ আর বিস্ময় উপহার দেবেন এ বছর?
সংক্ষিপ্ত স্কোর
চিটাগং ভাইকিংস: ২০ ওভারে ১৭৬/৪ (তামিম ৩৩, দিলশান ৩৬, এনামুল ৩৯*, কাপুগেদারা ২, ইয়াসির ২২, জিয়া ৩৯*; মাহমুদুল ০/২৩, সান্টোকি ০/১৯, মাশরাফি ১/৩০, নারাইন ১/২৯, জাইদি ২/২৯, হায়দার ০/৪৪)। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস: ১৮.৫ ওভারে ১৭৭/৩ (লিটন ৯, ইমরুল ০, স্যামুয়েলস ৬৯*, শুভাগত ৩০, মাশরাফি ৫৬*; আমির ২/২৭, তাসকিন ০/৩৪, শফিউল ১/৪৩, আজমল ০/৩৫, আসিফ ০/১৮, জিয়া ০/১৮)।
ফল: কুমিল্লা ৭ উইকেটে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মাশরাফি বিন মুর্তজা (কুমিল্লা)।

Related

Sports Photo 4093971359939154112

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রিয় পাঠক! যদি পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে, অথবা পোস্টটিতে আপনার সমস্যা থেকে থাকে তবে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করার অনুরোধ করছি । কারন আপনার একটি ভালো মন্তব্য লেখককে আরো ভালো পোস্ট লেখার অনুপ্রেরণা যোগাবে। আশাকরি এমন কোন মন্তব্য করবেন না, যা পড়লে লেখকের কাছে খারাপ লাগতে পারে । সাথেই থাকুন ধন্যবাদ....

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷

emo-but-icon

পেজে লাইক দিন l

ভিজিট করেছেন

550,928
item