কেন আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃ) কেই রাসূল বানালেন? কেন উনাকেই আল্লাহ সিলেক্ট করলেন?

কেন আল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল বানালেন? কেন উনাকেই আল্লাহ সিলেক্ট করলেন? এই প্রশ্নগুলো আসে কারণ আমাদের এই হলিউড প্রজন্মের মানুষের ধারণা ...

কেন আল্লাহ মুহাম্মাদ ﷺ কে রাসূল বানালেন? কেন উনাকেই আল্লাহ সিলেক্ট করলেন? এই প্রশ্নগুলো আসে কারণ আমাদের এই হলিউড প্রজন্মের মানুষের ধারণা রাসূল, নবী, আল্লাহর আউলিয়া ব্যাপারগুলো তাদের দেখা আজগুবি হলিউড মুভির মত কিছু একটা, সেখানে গল্পের নায়কের মত নবী, রাসূলের ব্যাপারগুলোকেও এরা ফ্যান্টাসি মনে করে। সুপার ম্যান উড়ে বেড়াচ্ছে, এক্স ম্যানদের অদ্ভুত অদ্ভুত ক্ষমতা, বিশাল চাকার হোন্ডায় চড়ে ছুটে বেড়াচ্ছে ব্যাটম্যান, কেউ তাকে ধরতে পারছে না, কিংবা দুনিয়ায় এসে ভিলেনের সাথে যুদ্ধ করছে বজ্রদেবতা, এলিয়েন, আরো কত হাবিজাবি। এদের কাছে নবী, রাসূলের ব্যাপারগুলোও তাই অনেকটা এরকম সিনারিও। তাদের বিশেষ ক্ষমতা ছিল বলেই তারা ওসব করে যেতে পেরেছে, ভাবটা এমন যেন আমাকে দিলে আমিও তো পারতাম! কিন্তু বাস্তবতা আমাদের এই হলিউড প্রজন্মের মত এত ফ্যান্টাসিতে ভরা ছিল না। আমাদের নবী রাসূল, আউলিয়ারিয়াও মানুষই ছিলেন, তারা কেউ এলিয়েন ছিলেন না, সবসময় জায়নামাজে চড়ে উড়ে বেড়াতেন না, শুধু অলৌকিকতা দেখিয়ে বেড়াতেন না। মুহাম্মাদ ﷺ ও একজন মানুষই ছিলেন। কেমন মানুষ?

তিনি আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি আগে পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়ার পরও আল্লাহর কাছে দিনে শতবার তাওবা করতেন। যিনি মাঝরাতে তাহাজ্জুতের সালাতে দাঁড়াতেন, এই দাঁড়ানো এত দীর্ঘ হত যে পা ফুলে যেত, যখন উনার স্ত্রী প্রশ্ন করতো আপনার এত কষ্ট করার কি দরকার, আপনার তো আগে পরের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে, তিনি বিনয়ের সাথে উত্তর দিতেন, আমি কি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হবো না!!
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি সন্তানের মৃত্যুতে কেঁদেছেন, স্ত্রীদের সাথে অভিমান করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন, যিনি নিজের ছেঁড়া জামা নিজের হাতে সেলাই করেছেন, যিনি যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া সঙ্গীদের মাথা কোলে নিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন, নিজে কবরে নেমে তাদের কবরস্থ করেছেন, যিনি কিশোরী স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করেছেন, প্রিয়তম স্ত্রী খাদিজার মৃত্যুতে ব্যথিত হয়েছেন, মাঝরাতে তার কবরের পাশে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন। তিনি আমাদের মতই একজন মানুষ, তিনি আমাদের রাসূল ﷺ।
.
হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। দিনের পর দিন যার বাড়িতে চুলায় আগুন জ্বলতো না। পানি আর খেজুর খেয়ে মাসের পর মাস চলে যেত। তিনি বসে ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উমারের সাথে। তাদের সামনে পড়ে ছিল একটা খেজুর, পচা খেজুর। রাসুল ﷺ সেটা তুলে নিলেন, পচা অংশটা পরিষ্কার করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমারকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি খাবেন কিনা। আবুদল্লাহ ইবনে উমার নারাজি হলেন। রাসূল ﷺ বললেন, ইয়া আব্দুল্লাহ তোমার কাছে এটা খাওয়া না খাওয়ার অপশন, আর আজ চারদিন হল তোমার রাসূলের পেটে কিছু পড়েনি। তিনিই আমাদের রাসুল ﷺ। আবু আইয়ুব আল আনসারির বাড়ীরে দাওয়াত খেতে বসে একটা রুটির উপর এক টুকরো গোশত দিয়ে আবু আইয়্যুবকে বললেন, যাও এটা আমার কন্যা ফাতিমাকে একটু দিয়ে এসো, সে এমন খাবার অনেক দিন খায়নি। তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। ক্ষুধার্ত সাহাবী এসে ক্ষুধার জ্বালায় নিজের পেটে পাথর দেখালে তিনি নিজের জামা তুলে দেখালেন তার পেটে এর চেয়েও বেশী পাথর বাঁধা। তিনিই আমাদের রাসুল ﷺ। যিনি কোনদিন এক তরকারীর বেশী দিয়ে আহার করেননি। যার একটার বেশী জামা ছিল না, যার ঘর ছিল মাটির, বালিশ ছিল খেজুরের ছোবলা। আল্লাহর কসম! তিনিই আমাদের রাসুল ﷺ।
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি বদরের প্রান্তরে অল্প কিছু আল্লাহর বান্দা নিয়ে বিশাল শত্রু বাহীনীর মোকাবেলা করতে গিয়েছেন, মুসলিমদের বিজয়ের জন্য আল্লাহর কাছে সেজদায় পড়ে কেঁদেছেন যতক্ষণ না আল্লাহ উনাকে সুসংবাদ না দেন, তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি তাইফের প্রান্তরে প্রস্তরাঘাতে ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত হয়েও আল্লাহর কাছে হাত উঠিয়ে বলেছেন, হে আল্লাহ তারা অবুঝ, তুমি তাদেরকে ক্ষমা করে দাও। তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ যিনি নিজের পিতামাতার জন্য দোয়া করার অনুমতি পাননি। যিনি মৃত্যুর সময়ও চেতন অবচেতন অবস্থায় বারবার আওড়িয়ে যাচ্ছিলেন, উম্মাতি উম্মাতি উম্মাতি…। তিনিই আমাদের রাসুল ﷺ, সাহাবীদের সাথে চলতে গিয়ে তিনি কেঁদে উঠলেন, সাহাবীরা কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আমি আমার ভাইদের জন্য কাঁদছি। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমরা কি আপনার ভাই নই? তিনি জবাব দিলেন, তোমরা তো আমার সাথী, আমার ভাই হল তারা যারা আমার পরে আসবে আর আমাকে না দেখেই আমার উপর ঈমান আনবে। হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ, যিনি আমার আপনার জন্মের আগেই আমাদের জন্য চোখের পানি ফেলেছেন।
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যার আত্মীয় স্বজন গোত্রীয় লোকেরাই উনাকে হত্যার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। যিনি আল্লাহর দ্বীনের জন্য ঘর বাড়ী আত্মীয় স্বজন সবকিছু ছেড়ে গেছেন, যিনি স্বজাতির হাত থেকে বাঁচতে পাহাড়ে গুহায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, মুশরিকরা যখন একের পর এক ক্ষমতা, সম্পদ, নারীর লোভ দেখাচ্ছিল তিনি তাদের বলেছিলেন, আমার এক হাতে চন্দ্র আর আরেক হাতে সূর্য এনে দিলেও আমি এই সত্য প্রচার থেকে বিরত হবো না। হয় এতে বিজয় লাভ করব নয়তো এই পথেই ধ্বংস হয়ে যাবো। তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ।
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছে অকাতরে। যুদ্ধের আগে কিছুই দিতে না পেরে এক মা তার বাচ্চাকে রাসূলের সামনে তুলে দিয়ে বলছিলেন, যখন আপনাকে শত্রুরা আঘাত করবে আপনি আমার এই সন্তানকে ঢাল হিসেবে ধরবেন, আমার সন্তান ছিন্ন ভিন্ন হবে কিন্তু অন্তত আমার রাসূল শত্রুর আঘাত থেকে রক্ষা পাবে।
.
হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ, আবু আইউব আল আনসারীর বাড়িতে যেদিন তিনি মেহমান হলেন, রাসূল ﷺ নিচ তলায় আর তারা স্বামী স্ত্রী উপর তলায়, এটা বেয়াদবি হয়ে গেল কিনা এই চিন্তায় সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন । তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ, যার জন্য সাহাবীরা আপন পিতা ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। যুদ্ধলব্ধ গনীমাহ না পেয়ে মন খারাপ করা আনসারদের যখন তিনি বললেন, এটাই কি তোমাদের জন্য উত্তম নয় যে তারা দুনিয়া পেল আর তোমরা তোমাদের রাসূলকে পেলে তখন চারিদিকে কান্নার রোল পড়ে গিয়েছিল। হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি খোদ অমুসলিমদের কাছেও আস্থার প্রতীক ছিলেন, অমুসলিমরা তার কাছে বিচার ফয়সালার জন্য আসতো। তারা জানতো মুহাম্মাদ আর যাই হোক অবিচার করবে না।
.
তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ। যিনি আমাদের জন্য হাশরের মাঠে আল্লাহর কাছে শাফায়েত করবেন, আমাদেরকে হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন। হ্যাঁ তিনিই আমাদের রাসূল ﷺ।
.
আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। আমরা এই রাসূলের প্রতি আমাদের হক্ব আদায় করতে পারিনি। তার ইজ্জতের যথাযোগ্য মর্যাদা দিতে পারিনি। আসসালামুয়ালাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
______________
.
আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ‘আলা নাবীয়্যিনা মুহাম্মাদ
.
আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ‘আলা নাবীয়্যিনা মুহাম্মাদ
.
আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ‘আলা নাবীয়্যিনা মুহাম্মাদ

Related

Islamic 1466316343308080861

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রিয় পাঠক! যদি পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে, অথবা পোস্টটিতে আপনার সমস্যা থেকে থাকে তবে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করার অনুরোধ করছি । কারন আপনার একটি ভালো মন্তব্য লেখককে আরো ভালো পোস্ট লেখার অনুপ্রেরণা যোগাবে। আশাকরি এমন কোন মন্তব্য করবেন না, যা পড়লে লেখকের কাছে খারাপ লাগতে পারে । সাথেই থাকুন ধন্যবাদ....

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷

emo-but-icon

পেজে লাইক দিন l

ভিজিট করেছেন

item