হাদিসের গল্পঃ পাহাড়ের গুহায় আঁটকে পড়া তিন যুবক

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে- একবার তিনজন লোক পথ চলছিল, এমন সময় তারা বৃষ্টিতে আক্রা...

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না

রহমান রহীম আল্লাহ্‌ তায়ালার নামে-

the_cave_beam_lead_my_way
একবার তিনজন লোক পথ চলছিল, এমন সময় তারা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হ’ল। অতঃপর তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় হ’তে এক খন্ড পাথর পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বলল, নিজেদের কৃত কিছু সৎকাজের কথা চিন্তা করে বের কর, যা আললাহর সন্তুষ্টির জন্য তোমরা করেছ এবং তার মাধ্যমে আললাহর নিকট দো‘আ কর। তাহ’লে হয়ত আল্লাহ্‌ তোমাদের উপর হ’তে পাথরটি সরিয়ে দিবেন।
তাদের একজন বলতে লাগল, হে আল্লাহ্‌! আমার আববা-আম্মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিল। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধ্যায় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তান্দের  আগে আমার আববা-আম্মাকে পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে দেরী হয় এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না। এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। আমি দুধ দোহন করলাম, যেমন প্রতিদিন দোহন করি। তারপর আমি তাঁদের শিয়রে (দুধ নিয়ে) দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে জাগানো আমি পছন্দ করিনি এবং তাদের আগে আমার বাচ্চাদেরকে পান করানোও সঙ্গত মনে করিনি। অথচ বাচ্চাগুলো দুধের জন্য আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। এভাবে ভোর হয়ে গেল। হে আল্লাহ্‌! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করে থাকি তবে আপনি আমাদের হ’তে পাথরটা খানিক সরিয়ে দিন, যাতে আমরা আসমানটা দেখতে পাই। তখন আল্লাহ পাথরটাকে একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখতে পেল।
দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। পুরুষরা যেমন মহিলাদেরকে ভালবাসে,আমি   তাকে  তার চেয়েও অধিক ভালবাসতাম। একদিন আমি তার কাছে চেয়ে বসলাম (অর্থাৎ খারাপ কাজ করতে চাইলাম)। কিন্তু তা সে অস্বীকার করল যে পর্যন্ত না আমি তার জন্য একশ’ দিনার নিয়ে আসি। পরে চেষ্টা করে আমি তা যোগাড় করলাম (এবং তার কাছে এলাম)। যখন আমি তার দু’পায়ের মাঝে বসলাম (অর্থাৎ সম্ভোগ করতে তৈরী হলাম) তখন সে বলল, হে আললাহর বান্দা! আল্লাহকে ভয়  কর। অন্যায়ভাবে মোহর (পর্দা) ছিঁড়ে দিয়ো না। (অর্থাৎ আমার সতীত্ব নষ্ট করো না)। তখন আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে আপনি আমাদের জন্য পাথরটা সরিয়ে দিন। তখন পাথরটা কিছুটা সরে গেল।
তৃতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ্‌! আমি এক ‘ফারাক’ চাউলের বিনিময়ে একজন শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলাম। যখন সে তার কাজ শেষ করল আমাকে বলল, আমার পাওনা দিয়ে দাও। আমি তাকে তার পাওনা দিতে গেলে সে তা নিল না। আমি তা দিয়ে কৃষি কাজ করতে লাগলাম এবং এর দ্বারা অনেক গরু ও তার রাখাল জমা করলাম। বেশ কিছু দিন পর সে আমার কাছে আসল এবং বলল, আল্লাহকে ভয় কর (আমার মজুরী দাও)। আমি বললাম, এই সব গরু ও রাখাল নিয়ে নাও। সে বলল, আল্লাহকে ভয় কর, আমার সাথে ঠাট্টা কর না। আমি বললাম, আমি তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না, ঐগুলো নিয়ে নাও। তখন সে তা নিয়ে গেল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন, যদি আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের জন্য এ কাজটি করে থাকি, তবে পাথরের বাকীটুকু সরিয়ে দিন। তখন আল্লাহ পাথরটাকে সরিয়ে দিলেন।
(আব্দুললাহ  ইবনু  ওমর  (রাঃ)  হ’তে  বর্ণিত,  বুখারী  হা/২৩৩৩,  ‘চাষাবাদ’  অধ্যায়, অনুচেছদ-১৩; মুসলিম হা/২৭৪৩, মিশকাত হা/৪৯৩৮)।
শিক্ষা :
১. বান্দা সুখে-দুঃখে সর্বদা আল্লাহকে ডাকবে।
২. বিপদাপদের সময় আল্লাহকে ব্যতীত কোন মৃত ব্যক্তি বা অন্য কাউকে ডাকা শিরকে আকবর বা বড় শিরক।
৩. সৎ আমলকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করতে হবে।
৪. পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে হবে এবং স্ত্রী ও সন্তানদের উপর তাদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৫. শ্রমিককে তার ন্যায্য পাওনা প্রদান করতে হবে।
ডা: মোহাম্মদ আবুল কালাম আব্দুলাহ্: রোমান সাম্রাজ্যের দাপট কে না জানে। দুনিয়ার এমন কোনো শক্তি ছিল না যে, রোমানদের পরাভূত করতে পারে। এমন শক্তিধর রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলও এক এক করে পদানত হতে লাগল মুসলমানদের। মুসলিম বীর খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলমান দলের সেনাপতি। রোমকদের সেনাপতি রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের ভাই। তিনি মুসলমানদের কাছে পরাজিত হতে হতে আর তিষ্ঠাতে পারছিলেন না। বিস্ময়ে হতবাক রোমান সেনাপতি। মুসলমানের সংখ্যা কম, অস্ত্র কম, সৈন্যসামন্ত কম- তারপরও কিভাবে এমনটা সম্ভব? কিসের বলে বলীয়ান মুসলমানরা? রোমান সেনাপতি গোয়েন্দা লাগিয়ে দিলেন মুসলমানের মধ্যে। গোয়েন্দাকে জানতে হবে কোন শক্তিবলে মুসলমানরা এমন শক্তিশালী। গোয়েন্দা ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করল। সেনাপতির কাছে যথাসময়ে জমা দিলো তার রিপোর্ট। কয়েকটি মাত্র কথার রিপোর্ট- ‘মুসলমানরা দিনে একেকজন যুদ্ধের মাঠের বীর সেনানী। রাতে দুনিয়ার সবচেয়ে নিঃস্ব, অসহায়, দুর্বল, কাঙ্গাল- যাদের রোনাজারি শুধু স্বর্গ-মর্ত্য তথা বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহর কাছে। মাওলার দরবারে দু’হাত তুলে কাঁদতে কাঁদতে তাদের গণ্ডদেশে অশ্র“র প্লাবন বয়ে যায়। কে বলবে দিনের সূর্যের আলোয় এদের রণ হুঙ্কার দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধরদের পিলে চমকায়?’allah
এমনটাই ছিল মুসলমানের চরিত্রবৈশিষ্ট্য- রাতে দরবেশ, দিনে বীর যোদ্ধা। ‘লাক্বাদ কানা ফি রাসূলুল্লাহি উসওয়াতুন হাসানা- রাসূল সা:-এর চরিত্রের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শের নমুনা।’ আর এ রাসূল সা:-এর চরিত্র ছিল জীবন্ত কুরআন। আল কুরআন মুসলমানের জীবন পরিচালনার জন্য সংবিধান। মুসলমানরা দুনিয়ায় কী কাজ করবে, কী কাজ করবে না, কিভাবে চলবে, কিভাবে চলবে না, কী কথা বলবে, কী কথা বলবে না, কী চিন্তা-বিশ্বাস করবে, কী বিশ্বাস করবে না- এমন সব বিধিবিধানের সমাহার দেখা যাবে আল কুরআনের পাতায় পাতায়। ও দুনিয়ার মুসলমান, এগুলো কাদের জন্য পালনীয় আর মান্য? কথা ছিল দুনিয়ার সব মানুষ আল্লাহর এ বিধিবিধান মেনে চলে তাদের দুনিয়ার জিন্দেগি পরিচালনা করবে। কারণ, এমনটাই ছিল আল্লাহর ঘোষণা, ‘আমার পক্ষ থেকে যুগে যুগে জীবনবিধান দেয়া হবে। দুনিয়ায় তা মেনে চললে ভয়ের কোনো কারণ থাকবে না। আবার তোমরা ফিরে আসতে পারবে এ জান্নাতে।’
মানব জাতির আদি পিতা-মাতা বাবা আদম আ: এবং মা হাওয়াকে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর সময় আল্লাহর জানিয়ে দেয়া এ প্রতিশ্র“তির রূপায়ণই হলো যুগে যুগে আল্লাহ প্রদত্ত বাণী-আসমানি কিতাব। আল কুরআন এসব কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ। অন্যান্য আসমানী গ্রন্থ বিশেষ বিশেষ কোনো কওম বা জাতির জন্য নাজিল হয়েছিল। কিন্তু আল কুরআন দুনিয়াবাসী সব মানুষের জন্য। কাজেই আল্লাহর এ কুরআনিক বিধিবিধান দুনিয়ার সব মানুষের জন্য তাদের প্রভু আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবনবিধান। কিন্তু দুর্ভাগ্য দুনিয়ার বিরাট একটা মানবগোষ্ঠীর- তারা প্রভুর এ বিধানকে মানতে অস্বীকার করল। যারা মেনে আল্লাহর এ বিধিবিধানের কাছে তথা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পণ করল তারা সৌভাগ্যের অধিকারী-মুসলমান। আল্লাহর ঘোষণা মতে এ মুসলমানের পরিণতি জান্নাত, যদি তারা কুরআনিক বিধান পুরাপুরিভাবে, ঠিক আল্লাহর চাওয়ার মতো করে দুনিয়ার জীবনে মেনে চলে। মুসলমানের তথা ঈমানদারদের কাছে আল্লাহর সে চাওয়াটা কেমন? ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’
পুরাপুরিভাবে ইসলামের মধ্যে দাখিল হওয়া মানে কী? এর মানে হলো, মুসলমান তার জীবনে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে তার সমাধান কুরআন থেকে নেবে। অন্যভাবে বলা যায়, মুসলমান তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের তথা কুরআনের বিধিবিধান মান্য করে চলবে। এটাই আল্লাহর চাওয়া মুসলমান তথা ঈমানদারদের কাছে। মাওলার এমন চাওয়া যারা পূরণ করতে পারবে তারাই জান্নাতে যাবে, ব্যতিক্রমকারী নয়। আর মুসলমান এ কাজে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে সর্বশেষ নবী, দুনিয়াবাসী সবার নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবন চরিতকে। নবী সা:-এর জীবন চরিতই ছিল ওপরে বর্ণিত মুসলমানের চরিত্রের অনুরূপ- রাতে আল্লাহর দরবারে যাঁর কাকুুতি-মিনতি-যাচনায় কান্নার রোল তাঁর পবিত্র গণ্ডদেশ ভাসিয়েছে, দিনে তাঁর অনন্যসাধারণ সেনাপতিত্বে কাফিরদের তখতেতাউস খানখান করেছে। রাতের শেষ প্রান্তে যে নবী তাঁর প্রভুর দরবারে আহাজারি আর রোনাজারিতে আকাশ-বাতাস স্তব্ধ করেছেন; দিনের বেলা সেই নবী সা:ই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সংস্কারে জীবন উৎসর্গ করেছেন। রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা কেমন করে চলবে তা-ও দেখিয়েছেন তিনি। একেবারে পুরাপুরি কুরআনিক চাহিদার বাস্তবায়ন ছিল তাঁর জীবন। আল্লাহ ঠিক যেভাবে চেয়েছেন। তাই তো আমাদের নবীজী সা:-এর জীবনকে জীবন্ত কুরআন বলা হয়। খেলাফতে রাশেদার যুগ পর্যন্ত সাহাবাদের জীবনে নবীজীর জীবনের এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণ হয়েছে। তারপর থেকেই মুসলমানের জীবনে শুরু হয় নৈতিক স্খলন। সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রকমের আজগুবি সব পথ-মতের। কেউ শুধু রাতের দরবেশি জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, অন্য দিকে কেউ আবার দিনের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ততায় রাতে মাওলার কাছে রোনাজারি আর আহাজারির কথা বেমালুম ভুলে বসল। যে চরিত্রবৈশিষ্ট্যের সমাহার থাকার কথা ছিল একই মুসলমান ব্যক্তির মধ্যে তা আলাদাভাবে ভিন্নজন, ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অবস্থান করতে লাগল। অঙ্গহানি ঘটল মুসলিম চরিত্রের। ফল হলো এইÑ কুরআনিক এবং শেষ নবী মুহাম্মদ সা:-এর উম্মত মুসলমান দুনিয়া থেকে নির্বাসনে চলে গেল। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজ দুনিয়াময় মুসলমান নামধারী এক বিরাট জাতিগোষ্ঠী যা দেখছি আমরা তা কুরআন আর সুন্নাহ বিবর্জিত, এক ইসলামের ভেতরে নানা রকম উদ্ভটসব ফের্কাধারী একেক ননইসলামিক গোষ্ঠী, যারা ইহজীবনে সব তুষের আগুনে জ্বলছে, হয়তো পরকালীন জীবনেও জাহান্নাম ছাড়া তাদের গতি নেই। কেননা এ ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী- ‘তবে কি তোমরা কিতাবের এক অংশ বিশ্বাস করো অপর অংশকে করো অবিশ্বাস? জেনে রাখো তোমাদের মধ্যে যাদেরই এমন আচরণ হবে তাদের এতদ্ব্যতীত আর কী শাস্তি হতে পারে যে, তারা পার্থিব জীবনে অপমানিত আর লাঞ্ছিত হতে থাকবে এবং পরকালে তাদের কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা বাকারা : ৮৫,৮৬)।’ আসুন আমরা জীবন্ত কুরআন নবী সা:-এর পুরাপুরি অনুসরণের মাধ্যমে কুরআনিক মুসলমান হই।
- See more at: http://islamicnews24.net/110071-2/#sthash.qrVKNNNn.dpuf
ডা: মোহাম্মদ আবুল কালাম আব্দুলাহ্: রোমান সাম্রাজ্যের দাপট কে না জানে। দুনিয়ার এমন কোনো শক্তি ছিল না যে, রোমানদের পরাভূত করতে পারে। এমন শক্তিধর রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলও এক এক করে পদানত হতে লাগল মুসলমানদের। মুসলিম বীর খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলমান দলের সেনাপতি। রোমকদের সেনাপতি রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের ভাই। তিনি মুসলমানদের কাছে পরাজিত হতে হতে আর তিষ্ঠাতে পারছিলেন না। বিস্ময়ে হতবাক রোমান সেনাপতি। মুসলমানের সংখ্যা কম, অস্ত্র কম, সৈন্যসামন্ত কম- তারপরও কিভাবে এমনটা সম্ভব? কিসের বলে বলীয়ান মুসলমানরা? রোমান সেনাপতি গোয়েন্দা লাগিয়ে দিলেন মুসলমানের মধ্যে। গোয়েন্দাকে জানতে হবে কোন শক্তিবলে মুসলমানরা এমন শক্তিশালী। গোয়েন্দা ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করল। সেনাপতির কাছে যথাসময়ে জমা দিলো তার রিপোর্ট। কয়েকটি মাত্র কথার রিপোর্ট- ‘মুসলমানরা দিনে একেকজন যুদ্ধের মাঠের বীর সেনানী। রাতে দুনিয়ার সবচেয়ে নিঃস্ব, অসহায়, দুর্বল, কাঙ্গাল- যাদের রোনাজারি শুধু স্বর্গ-মর্ত্য তথা বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহর কাছে। মাওলার দরবারে দু’হাত তুলে কাঁদতে কাঁদতে তাদের গণ্ডদেশে অশ্র“র প্লাবন বয়ে যায়। কে বলবে দিনের সূর্যের আলোয় এদের রণ হুঙ্কার দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধরদের পিলে চমকায়?’allah
এমনটাই ছিল মুসলমানের চরিত্রবৈশিষ্ট্য- রাতে দরবেশ, দিনে বীর যোদ্ধা। ‘লাক্বাদ কানা ফি রাসূলুল্লাহি উসওয়াতুন হাসানা- রাসূল সা:-এর চরিত্রের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শের নমুনা।’ আর এ রাসূল সা:-এর চরিত্র ছিল জীবন্ত কুরআন। আল কুরআন মুসলমানের জীবন পরিচালনার জন্য সংবিধান। মুসলমানরা দুনিয়ায় কী কাজ করবে, কী কাজ করবে না, কিভাবে চলবে, কিভাবে চলবে না, কী কথা বলবে, কী কথা বলবে না, কী চিন্তা-বিশ্বাস করবে, কী বিশ্বাস করবে না- এমন সব বিধিবিধানের সমাহার দেখা যাবে আল কুরআনের পাতায় পাতায়। ও দুনিয়ার মুসলমান, এগুলো কাদের জন্য পালনীয় আর মান্য? কথা ছিল দুনিয়ার সব মানুষ আল্লাহর এ বিধিবিধান মেনে চলে তাদের দুনিয়ার জিন্দেগি পরিচালনা করবে। কারণ, এমনটাই ছিল আল্লাহর ঘোষণা, ‘আমার পক্ষ থেকে যুগে যুগে জীবনবিধান দেয়া হবে। দুনিয়ায় তা মেনে চললে ভয়ের কোনো কারণ থাকবে না। আবার তোমরা ফিরে আসতে পারবে এ জান্নাতে।’
মানব জাতির আদি পিতা-মাতা বাবা আদম আ: এবং মা হাওয়াকে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর সময় আল্লাহর জানিয়ে দেয়া এ প্রতিশ্র“তির রূপায়ণই হলো যুগে যুগে আল্লাহ প্রদত্ত বাণী-আসমানি কিতাব। আল কুরআন এসব কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ। অন্যান্য আসমানী গ্রন্থ বিশেষ বিশেষ কোনো কওম বা জাতির জন্য নাজিল হয়েছিল। কিন্তু আল কুরআন দুনিয়াবাসী সব মানুষের জন্য। কাজেই আল্লাহর এ কুরআনিক বিধিবিধান দুনিয়ার সব মানুষের জন্য তাদের প্রভু আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবনবিধান। কিন্তু দুর্ভাগ্য দুনিয়ার বিরাট একটা মানবগোষ্ঠীর- তারা প্রভুর এ বিধানকে মানতে অস্বীকার করল। যারা মেনে আল্লাহর এ বিধিবিধানের কাছে তথা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পণ করল তারা সৌভাগ্যের অধিকারী-মুসলমান। আল্লাহর ঘোষণা মতে এ মুসলমানের পরিণতি জান্নাত, যদি তারা কুরআনিক বিধান পুরাপুরিভাবে, ঠিক আল্লাহর চাওয়ার মতো করে দুনিয়ার জীবনে মেনে চলে। মুসলমানের তথা ঈমানদারদের কাছে আল্লাহর সে চাওয়াটা কেমন? ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’
পুরাপুরিভাবে ইসলামের মধ্যে দাখিল হওয়া মানে কী? এর মানে হলো, মুসলমান তার জীবনে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে তার সমাধান কুরআন থেকে নেবে। অন্যভাবে বলা যায়, মুসলমান তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের তথা কুরআনের বিধিবিধান মান্য করে চলবে। এটাই আল্লাহর চাওয়া মুসলমান তথা ঈমানদারদের কাছে। মাওলার এমন চাওয়া যারা পূরণ করতে পারবে তারাই জান্নাতে যাবে, ব্যতিক্রমকারী নয়। আর মুসলমান এ কাজে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে সর্বশেষ নবী, দুনিয়াবাসী সবার নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবন চরিতকে। নবী সা:-এর জীবন চরিতই ছিল ওপরে বর্ণিত মুসলমানের চরিত্রের অনুরূপ- রাতে আল্লাহর দরবারে যাঁর কাকুুতি-মিনতি-যাচনায় কান্নার রোল তাঁর পবিত্র গণ্ডদেশ ভাসিয়েছে, দিনে তাঁর অনন্যসাধারণ সেনাপতিত্বে কাফিরদের তখতেতাউস খানখান করেছে। রাতের শেষ প্রান্তে যে নবী তাঁর প্রভুর দরবারে আহাজারি আর রোনাজারিতে আকাশ-বাতাস স্তব্ধ করেছেন; দিনের বেলা সেই নবী সা:ই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সংস্কারে জীবন উৎসর্গ করেছেন। রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা কেমন করে চলবে তা-ও দেখিয়েছেন তিনি। একেবারে পুরাপুরি কুরআনিক চাহিদার বাস্তবায়ন ছিল তাঁর জীবন। আল্লাহ ঠিক যেভাবে চেয়েছেন। তাই তো আমাদের নবীজী সা:-এর জীবনকে জীবন্ত কুরআন বলা হয়। খেলাফতে রাশেদার যুগ পর্যন্ত সাহাবাদের জীবনে নবীজীর জীবনের এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণ হয়েছে। তারপর থেকেই মুসলমানের জীবনে শুরু হয় নৈতিক স্খলন। সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রকমের আজগুবি সব পথ-মতের। কেউ শুধু রাতের দরবেশি জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, অন্য দিকে কেউ আবার দিনের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ততায় রাতে মাওলার কাছে রোনাজারি আর আহাজারির কথা বেমালুম ভুলে বসল। যে চরিত্রবৈশিষ্ট্যের সমাহার থাকার কথা ছিল একই মুসলমান ব্যক্তির মধ্যে তা আলাদাভাবে ভিন্নজন, ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অবস্থান করতে লাগল। অঙ্গহানি ঘটল মুসলিম চরিত্রের। ফল হলো এইÑ কুরআনিক এবং শেষ নবী মুহাম্মদ সা:-এর উম্মত মুসলমান দুনিয়া থেকে নির্বাসনে চলে গেল। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজ দুনিয়াময় মুসলমান নামধারী এক বিরাট জাতিগোষ্ঠী যা দেখছি আমরা তা কুরআন আর সুন্নাহ বিবর্জিত, এক ইসলামের ভেতরে নানা রকম উদ্ভটসব ফের্কাধারী একেক ননইসলামিক গোষ্ঠী, যারা ইহজীবনে সব তুষের আগুনে জ্বলছে, হয়তো পরকালীন জীবনেও জাহান্নাম ছাড়া তাদের গতি নেই। কেননা এ ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী- ‘তবে কি তোমরা কিতাবের এক অংশ বিশ্বাস করো অপর অংশকে করো অবিশ্বাস? জেনে রাখো তোমাদের মধ্যে যাদেরই এমন আচরণ হবে তাদের এতদ্ব্যতীত আর কী শাস্তি হতে পারে যে, তারা পার্থিব জীবনে অপমানিত আর লাঞ্ছিত হতে থাকবে এবং পরকালে তাদের কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা বাকারা : ৮৫,৮৬)।’ আসুন আমরা জীবন্ত কুরআন নবী সা:-এর পুরাপুরি অনুসরণের মাধ্যমে কুরআনিক মুসলমান হই।
- See more at: http://islamicnews24.net/110071-2/#sthash.qrVKNNNn.dpuf
ডা: মোহাম্মদ আবুল কালাম আব্দুলাহ্: রোমান সাম্রাজ্যের দাপট কে না জানে। দুনিয়ার এমন কোনো শক্তি ছিল না যে, রোমানদের পরাভূত করতে পারে। এমন শক্তিধর রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলও এক এক করে পদানত হতে লাগল মুসলমানদের। মুসলিম বীর খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলমান দলের সেনাপতি। রোমকদের সেনাপতি রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের ভাই। তিনি মুসলমানদের কাছে পরাজিত হতে হতে আর তিষ্ঠাতে পারছিলেন না। বিস্ময়ে হতবাক রোমান সেনাপতি। মুসলমানের সংখ্যা কম, অস্ত্র কম, সৈন্যসামন্ত কম- তারপরও কিভাবে এমনটা সম্ভব? কিসের বলে বলীয়ান মুসলমানরা? রোমান সেনাপতি গোয়েন্দা লাগিয়ে দিলেন মুসলমানের মধ্যে। গোয়েন্দাকে জানতে হবে কোন শক্তিবলে মুসলমানরা এমন শক্তিশালী। গোয়েন্দা ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করল। সেনাপতির কাছে যথাসময়ে জমা দিলো তার রিপোর্ট। কয়েকটি মাত্র কথার রিপোর্ট- ‘মুসলমানরা দিনে একেকজন যুদ্ধের মাঠের বীর সেনানী। রাতে দুনিয়ার সবচেয়ে নিঃস্ব, অসহায়, দুর্বল, কাঙ্গাল- যাদের রোনাজারি শুধু স্বর্গ-মর্ত্য তথা বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহর কাছে। মাওলার দরবারে দু’হাত তুলে কাঁদতে কাঁদতে তাদের গণ্ডদেশে অশ্র“র প্লাবন বয়ে যায়। কে বলবে দিনের সূর্যের আলোয় এদের রণ হুঙ্কার দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধরদের পিলে চমকায়?’allah
এমনটাই ছিল মুসলমানের চরিত্রবৈশিষ্ট্য- রাতে দরবেশ, দিনে বীর যোদ্ধা। ‘লাক্বাদ কানা ফি রাসূলুল্লাহি উসওয়াতুন হাসানা- রাসূল সা:-এর চরিত্রের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শের নমুনা।’ আর এ রাসূল সা:-এর চরিত্র ছিল জীবন্ত কুরআন। আল কুরআন মুসলমানের জীবন পরিচালনার জন্য সংবিধান। মুসলমানরা দুনিয়ায় কী কাজ করবে, কী কাজ করবে না, কিভাবে চলবে, কিভাবে চলবে না, কী কথা বলবে, কী কথা বলবে না, কী চিন্তা-বিশ্বাস করবে, কী বিশ্বাস করবে না- এমন সব বিধিবিধানের সমাহার দেখা যাবে আল কুরআনের পাতায় পাতায়। ও দুনিয়ার মুসলমান, এগুলো কাদের জন্য পালনীয় আর মান্য? কথা ছিল দুনিয়ার সব মানুষ আল্লাহর এ বিধিবিধান মেনে চলে তাদের দুনিয়ার জিন্দেগি পরিচালনা করবে। কারণ, এমনটাই ছিল আল্লাহর ঘোষণা, ‘আমার পক্ষ থেকে যুগে যুগে জীবনবিধান দেয়া হবে। দুনিয়ায় তা মেনে চললে ভয়ের কোনো কারণ থাকবে না। আবার তোমরা ফিরে আসতে পারবে এ জান্নাতে।’
মানব জাতির আদি পিতা-মাতা বাবা আদম আ: এবং মা হাওয়াকে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর সময় আল্লাহর জানিয়ে দেয়া এ প্রতিশ্র“তির রূপায়ণই হলো যুগে যুগে আল্লাহ প্রদত্ত বাণী-আসমানি কিতাব। আল কুরআন এসব কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ। অন্যান্য আসমানী গ্রন্থ বিশেষ বিশেষ কোনো কওম বা জাতির জন্য নাজিল হয়েছিল। কিন্তু আল কুরআন দুনিয়াবাসী সব মানুষের জন্য। কাজেই আল্লাহর এ কুরআনিক বিধিবিধান দুনিয়ার সব মানুষের জন্য তাদের প্রভু আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবনবিধান। কিন্তু দুর্ভাগ্য দুনিয়ার বিরাট একটা মানবগোষ্ঠীর- তারা প্রভুর এ বিধানকে মানতে অস্বীকার করল। যারা মেনে আল্লাহর এ বিধিবিধানের কাছে তথা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পণ করল তারা সৌভাগ্যের অধিকারী-মুসলমান। আল্লাহর ঘোষণা মতে এ মুসলমানের পরিণতি জান্নাত, যদি তারা কুরআনিক বিধান পুরাপুরিভাবে, ঠিক আল্লাহর চাওয়ার মতো করে দুনিয়ার জীবনে মেনে চলে। মুসলমানের তথা ঈমানদারদের কাছে আল্লাহর সে চাওয়াটা কেমন? ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’
পুরাপুরিভাবে ইসলামের মধ্যে দাখিল হওয়া মানে কী? এর মানে হলো, মুসলমান তার জীবনে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে তার সমাধান কুরআন থেকে নেবে। অন্যভাবে বলা যায়, মুসলমান তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের তথা কুরআনের বিধিবিধান মান্য করে চলবে। এটাই আল্লাহর চাওয়া মুসলমান তথা ঈমানদারদের কাছে। মাওলার এমন চাওয়া যারা পূরণ করতে পারবে তারাই জান্নাতে যাবে, ব্যতিক্রমকারী নয়। আর মুসলমান এ কাজে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে সর্বশেষ নবী, দুনিয়াবাসী সবার নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবন চরিতকে। নবী সা:-এর জীবন চরিতই ছিল ওপরে বর্ণিত মুসলমানের চরিত্রের অনুরূপ- রাতে আল্লাহর দরবারে যাঁর কাকুুতি-মিনতি-যাচনায় কান্নার রোল তাঁর পবিত্র গণ্ডদেশ ভাসিয়েছে, দিনে তাঁর অনন্যসাধারণ সেনাপতিত্বে কাফিরদের তখতেতাউস খানখান করেছে। রাতের শেষ প্রান্তে যে নবী তাঁর প্রভুর দরবারে আহাজারি আর রোনাজারিতে আকাশ-বাতাস স্তব্ধ করেছেন; দিনের বেলা সেই নবী সা:ই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সংস্কারে জীবন উৎসর্গ করেছেন। রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা কেমন করে চলবে তা-ও দেখিয়েছেন তিনি। একেবারে পুরাপুরি কুরআনিক চাহিদার বাস্তবায়ন ছিল তাঁর জীবন। আল্লাহ ঠিক যেভাবে চেয়েছেন। তাই তো আমাদের নবীজী সা:-এর জীবনকে জীবন্ত কুরআন বলা হয়। খেলাফতে রাশেদার যুগ পর্যন্ত সাহাবাদের জীবনে নবীজীর জীবনের এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণ হয়েছে। তারপর থেকেই মুসলমানের জীবনে শুরু হয় নৈতিক স্খলন। সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রকমের আজগুবি সব পথ-মতের। কেউ শুধু রাতের দরবেশি জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, অন্য দিকে কেউ আবার দিনের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ততায় রাতে মাওলার কাছে রোনাজারি আর আহাজারির কথা বেমালুম ভুলে বসল। যে চরিত্রবৈশিষ্ট্যের সমাহার থাকার কথা ছিল একই মুসলমান ব্যক্তির মধ্যে তা আলাদাভাবে ভিন্নজন, ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অবস্থান করতে লাগল। অঙ্গহানি ঘটল মুসলিম চরিত্রের। ফল হলো এইÑ কুরআনিক এবং শেষ নবী মুহাম্মদ সা:-এর উম্মত মুসলমান দুনিয়া থেকে নির্বাসনে চলে গেল। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজ দুনিয়াময় মুসলমান নামধারী এক বিরাট জাতিগোষ্ঠী যা দেখছি আমরা তা কুরআন আর সুন্নাহ বিবর্জিত, এক ইসলামের ভেতরে নানা রকম উদ্ভটসব ফের্কাধারী একেক ননইসলামিক গোষ্ঠী, যারা ইহজীবনে সব তুষের আগুনে জ্বলছে, হয়তো পরকালীন জীবনেও জাহান্নাম ছাড়া তাদের গতি নেই। কেননা এ ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী- ‘তবে কি তোমরা কিতাবের এক অংশ বিশ্বাস করো অপর অংশকে করো অবিশ্বাস? জেনে রাখো তোমাদের মধ্যে যাদেরই এমন আচরণ হবে তাদের এতদ্ব্যতীত আর কী শাস্তি হতে পারে যে, তারা পার্থিব জীবনে অপমানিত আর লাঞ্ছিত হতে থাকবে এবং পরকালে তাদের কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা বাকারা : ৮৫,৮৬)।’ আসুন আমরা জীবন্ত কুরআন নবী সা:-এর পুরাপুরি অনুসরণের মাধ্যমে কুরআনিক মুসলমান হই।
- See more at: http://islamicnews24.net/110071-2/#sthash.qrVKNNNn.dpuf
ডা: মোহাম্মদ আবুল কালাম আব্দুলাহ্: রোমান সাম্রাজ্যের দাপট কে না জানে। দুনিয়ার এমন কোনো শক্তি ছিল না যে, রোমানদের পরাভূত করতে পারে। এমন শক্তিধর রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলও এক এক করে পদানত হতে লাগল মুসলমানদের। মুসলিম বীর খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলমান দলের সেনাপতি। রোমকদের সেনাপতি রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের ভাই। তিনি মুসলমানদের কাছে পরাজিত হতে হতে আর তিষ্ঠাতে পারছিলেন না। বিস্ময়ে হতবাক রোমান সেনাপতি। মুসলমানের সংখ্যা কম, অস্ত্র কম, সৈন্যসামন্ত কম- তারপরও কিভাবে এমনটা সম্ভব? কিসের বলে বলীয়ান মুসলমানরা? রোমান সেনাপতি গোয়েন্দা লাগিয়ে দিলেন মুসলমানের মধ্যে। গোয়েন্দাকে জানতে হবে কোন শক্তিবলে মুসলমানরা এমন শক্তিশালী। গোয়েন্দা ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করল। সেনাপতির কাছে যথাসময়ে জমা দিলো তার রিপোর্ট। কয়েকটি মাত্র কথার রিপোর্ট- ‘মুসলমানরা দিনে একেকজন যুদ্ধের মাঠের বীর সেনানী। রাতে দুনিয়ার সবচেয়ে নিঃস্ব, অসহায়, দুর্বল, কাঙ্গাল- যাদের রোনাজারি শুধু স্বর্গ-মর্ত্য তথা বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহর কাছে। মাওলার দরবারে দু’হাত তুলে কাঁদতে কাঁদতে তাদের গণ্ডদেশে অশ্র“র প্লাবন বয়ে যায়। কে বলবে দিনের সূর্যের আলোয় এদের রণ হুঙ্কার দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধরদের পিলে চমকায়?’allah
এমনটাই ছিল মুসলমানের চরিত্রবৈশিষ্ট্য- রাতে দরবেশ, দিনে বীর যোদ্ধা। ‘লাক্বাদ কানা ফি রাসূলুল্লাহি উসওয়াতুন হাসানা- রাসূল সা:-এর চরিত্রের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শের নমুনা।’ আর এ রাসূল সা:-এর চরিত্র ছিল জীবন্ত কুরআন। আল কুরআন মুসলমানের জীবন পরিচালনার জন্য সংবিধান। মুসলমানরা দুনিয়ায় কী কাজ করবে, কী কাজ করবে না, কিভাবে চলবে, কিভাবে চলবে না, কী কথা বলবে, কী কথা বলবে না, কী চিন্তা-বিশ্বাস করবে, কী বিশ্বাস করবে না- এমন সব বিধিবিধানের সমাহার দেখা যাবে আল কুরআনের পাতায় পাতায়। ও দুনিয়ার মুসলমান, এগুলো কাদের জন্য পালনীয় আর মান্য? কথা ছিল দুনিয়ার সব মানুষ আল্লাহর এ বিধিবিধান মেনে চলে তাদের দুনিয়ার জিন্দেগি পরিচালনা করবে। কারণ, এমনটাই ছিল আল্লাহর ঘোষণা, ‘আমার পক্ষ থেকে যুগে যুগে জীবনবিধান দেয়া হবে। দুনিয়ায় তা মেনে চললে ভয়ের কোনো কারণ থাকবে না। আবার তোমরা ফিরে আসতে পারবে এ জান্নাতে।’
মানব জাতির আদি পিতা-মাতা বাবা আদম আ: এবং মা হাওয়াকে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর সময় আল্লাহর জানিয়ে দেয়া এ প্রতিশ্র“তির রূপায়ণই হলো যুগে যুগে আল্লাহ প্রদত্ত বাণী-আসমানি কিতাব। আল কুরআন এসব কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ। অন্যান্য আসমানী গ্রন্থ বিশেষ বিশেষ কোনো কওম বা জাতির জন্য নাজিল হয়েছিল। কিন্তু আল কুরআন দুনিয়াবাসী সব মানুষের জন্য। কাজেই আল্লাহর এ কুরআনিক বিধিবিধান দুনিয়ার সব মানুষের জন্য তাদের প্রভু আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবনবিধান। কিন্তু দুর্ভাগ্য দুনিয়ার বিরাট একটা মানবগোষ্ঠীর- তারা প্রভুর এ বিধানকে মানতে অস্বীকার করল। যারা মেনে আল্লাহর এ বিধিবিধানের কাছে তথা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পণ করল তারা সৌভাগ্যের অধিকারী-মুসলমান। আল্লাহর ঘোষণা মতে এ মুসলমানের পরিণতি জান্নাত, যদি তারা কুরআনিক বিধান পুরাপুরিভাবে, ঠিক আল্লাহর চাওয়ার মতো করে দুনিয়ার জীবনে মেনে চলে। মুসলমানের তথা ঈমানদারদের কাছে আল্লাহর সে চাওয়াটা কেমন? ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’
পুরাপুরিভাবে ইসলামের মধ্যে দাখিল হওয়া মানে কী? এর মানে হলো, মুসলমান তার জীবনে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে তার সমাধান কুরআন থেকে নেবে। অন্যভাবে বলা যায়, মুসলমান তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের তথা কুরআনের বিধিবিধান মান্য করে চলবে। এটাই আল্লাহর চাওয়া মুসলমান তথা ঈমানদারদের কাছে। মাওলার এমন চাওয়া যারা পূরণ করতে পারবে তারাই জান্নাতে যাবে, ব্যতিক্রমকারী নয়। আর মুসলমান এ কাজে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে সর্বশেষ নবী, দুনিয়াবাসী সবার নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবন চরিতকে। নবী সা:-এর জীবন চরিতই ছিল ওপরে বর্ণিত মুসলমানের চরিত্রের অনুরূপ- রাতে আল্লাহর দরবারে যাঁর কাকুুতি-মিনতি-যাচনায় কান্নার রোল তাঁর পবিত্র গণ্ডদেশ ভাসিয়েছে, দিনে তাঁর অনন্যসাধারণ সেনাপতিত্বে কাফিরদের তখতেতাউস খানখান করেছে। রাতের শেষ প্রান্তে যে নবী তাঁর প্রভুর দরবারে আহাজারি আর রোনাজারিতে আকাশ-বাতাস স্তব্ধ করেছেন; দিনের বেলা সেই নবী সা:ই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সংস্কারে জীবন উৎসর্গ করেছেন। রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা কেমন করে চলবে তা-ও দেখিয়েছেন তিনি। একেবারে পুরাপুরি কুরআনিক চাহিদার বাস্তবায়ন ছিল তাঁর জীবন। আল্লাহ ঠিক যেভাবে চেয়েছেন। তাই তো আমাদের নবীজী সা:-এর জীবনকে জীবন্ত কুরআন বলা হয়। খেলাফতে রাশেদার যুগ পর্যন্ত সাহাবাদের জীবনে নবীজীর জীবনের এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণ হয়েছে। তারপর থেকেই মুসলমানের জীবনে শুরু হয় নৈতিক স্খলন। সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রকমের আজগুবি সব পথ-মতের। কেউ শুধু রাতের দরবেশি জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, অন্য দিকে কেউ আবার দিনের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ততায় রাতে মাওলার কাছে রোনাজারি আর আহাজারির কথা বেমালুম ভুলে বসল। যে চরিত্রবৈশিষ্ট্যের সমাহার থাকার কথা ছিল একই মুসলমান ব্যক্তির মধ্যে তা আলাদাভাবে ভিন্নজন, ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অবস্থান করতে লাগল। অঙ্গহানি ঘটল মুসলিম চরিত্রের। ফল হলো এইÑ কুরআনিক এবং শেষ নবী মুহাম্মদ সা:-এর উম্মত মুসলমান দুনিয়া থেকে নির্বাসনে চলে গেল। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজ দুনিয়াময় মুসলমান নামধারী এক বিরাট জাতিগোষ্ঠী যা দেখছি আমরা তা কুরআন আর সুন্নাহ বিবর্জিত, এক ইসলামের ভেতরে নানা রকম উদ্ভটসব ফের্কাধারী একেক ননইসলামিক গোষ্ঠী, যারা ইহজীবনে সব তুষের আগুনে জ্বলছে, হয়তো পরকালীন জীবনেও জাহান্নাম ছাড়া তাদের গতি নেই। কেননা এ ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী- ‘তবে কি তোমরা কিতাবের এক অংশ বিশ্বাস করো অপর অংশকে করো অবিশ্বাস? জেনে রাখো তোমাদের মধ্যে যাদেরই এমন আচরণ হবে তাদের এতদ্ব্যতীত আর কী শাস্তি হতে পারে যে, তারা পার্থিব জীবনে অপমানিত আর লাঞ্ছিত হতে থাকবে এবং পরকালে তাদের কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা বাকারা : ৮৫,৮৬)।’ আসুন আমরা জীবন্ত কুরআন নবী সা:-এর পুরাপুরি অনুসরণের মাধ্যমে কুরআনিক মুসলমান হই।
- See more at: http://islamicnews24.net/110071-2/#sthash.qrVKNNNn.dpuf
ডা: মোহাম্মদ আবুল কালাম আব্দুলাহ্: রোমান সাম্রাজ্যের দাপট কে না জানে। দুনিয়ার এমন কোনো শক্তি ছিল না যে, রোমানদের পরাভূত করতে পারে। এমন শক্তিধর রোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলও এক এক করে পদানত হতে লাগল মুসলমানদের। মুসলিম বীর খালিদ বিন ওয়ালিদ মুসলমান দলের সেনাপতি। রোমকদের সেনাপতি রোমান সাম্রাজ্যের অধিপতি হিরাক্লিয়াসের ভাই। তিনি মুসলমানদের কাছে পরাজিত হতে হতে আর তিষ্ঠাতে পারছিলেন না। বিস্ময়ে হতবাক রোমান সেনাপতি। মুসলমানের সংখ্যা কম, অস্ত্র কম, সৈন্যসামন্ত কম- তারপরও কিভাবে এমনটা সম্ভব? কিসের বলে বলীয়ান মুসলমানরা? রোমান সেনাপতি গোয়েন্দা লাগিয়ে দিলেন মুসলমানের মধ্যে। গোয়েন্দাকে জানতে হবে কোন শক্তিবলে মুসলমানরা এমন শক্তিশালী। গোয়েন্দা ঘুরে ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করল। সেনাপতির কাছে যথাসময়ে জমা দিলো তার রিপোর্ট। কয়েকটি মাত্র কথার রিপোর্ট- ‘মুসলমানরা দিনে একেকজন যুদ্ধের মাঠের বীর সেনানী। রাতে দুনিয়ার সবচেয়ে নিঃস্ব, অসহায়, দুর্বল, কাঙ্গাল- যাদের রোনাজারি শুধু স্বর্গ-মর্ত্য তথা বিশ্বজাহানের প্রভু আল্লাহর কাছে। মাওলার দরবারে দু’হাত তুলে কাঁদতে কাঁদতে তাদের গণ্ডদেশে অশ্র“র প্লাবন বয়ে যায়। কে বলবে দিনের সূর্যের আলোয় এদের রণ হুঙ্কার দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধরদের পিলে চমকায়?’allah
এমনটাই ছিল মুসলমানের চরিত্রবৈশিষ্ট্য- রাতে দরবেশ, দিনে বীর যোদ্ধা। ‘লাক্বাদ কানা ফি রাসূলুল্লাহি উসওয়াতুন হাসানা- রাসূল সা:-এর চরিত্রের মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শের নমুনা।’ আর এ রাসূল সা:-এর চরিত্র ছিল জীবন্ত কুরআন। আল কুরআন মুসলমানের জীবন পরিচালনার জন্য সংবিধান। মুসলমানরা দুনিয়ায় কী কাজ করবে, কী কাজ করবে না, কিভাবে চলবে, কিভাবে চলবে না, কী কথা বলবে, কী কথা বলবে না, কী চিন্তা-বিশ্বাস করবে, কী বিশ্বাস করবে না- এমন সব বিধিবিধানের সমাহার দেখা যাবে আল কুরআনের পাতায় পাতায়। ও দুনিয়ার মুসলমান, এগুলো কাদের জন্য পালনীয় আর মান্য? কথা ছিল দুনিয়ার সব মানুষ আল্লাহর এ বিধিবিধান মেনে চলে তাদের দুনিয়ার জিন্দেগি পরিচালনা করবে। কারণ, এমনটাই ছিল আল্লাহর ঘোষণা, ‘আমার পক্ষ থেকে যুগে যুগে জীবনবিধান দেয়া হবে। দুনিয়ায় তা মেনে চললে ভয়ের কোনো কারণ থাকবে না। আবার তোমরা ফিরে আসতে পারবে এ জান্নাতে।’
মানব জাতির আদি পিতা-মাতা বাবা আদম আ: এবং মা হাওয়াকে বেহেস্ত থেকে দুনিয়ায় পাঠানোর সময় আল্লাহর জানিয়ে দেয়া এ প্রতিশ্র“তির রূপায়ণই হলো যুগে যুগে আল্লাহ প্রদত্ত বাণী-আসমানি কিতাব। আল কুরআন এসব কিতাবের সর্বশেষ সংস্করণ। অন্যান্য আসমানী গ্রন্থ বিশেষ বিশেষ কোনো কওম বা জাতির জন্য নাজিল হয়েছিল। কিন্তু আল কুরআন দুনিয়াবাসী সব মানুষের জন্য। কাজেই আল্লাহর এ কুরআনিক বিধিবিধান দুনিয়ার সব মানুষের জন্য তাদের প্রভু আল্লাহর পক্ষ থেকে জীবনবিধান। কিন্তু দুর্ভাগ্য দুনিয়ার বিরাট একটা মানবগোষ্ঠীর- তারা প্রভুর এ বিধানকে মানতে অস্বীকার করল। যারা মেনে আল্লাহর এ বিধিবিধানের কাছে তথা আল্লাহর কাছে নিজেদের সমর্পণ করল তারা সৌভাগ্যের অধিকারী-মুসলমান। আল্লাহর ঘোষণা মতে এ মুসলমানের পরিণতি জান্নাত, যদি তারা কুরআনিক বিধান পুরাপুরিভাবে, ঠিক আল্লাহর চাওয়ার মতো করে দুনিয়ার জীবনে মেনে চলে। মুসলমানের তথা ঈমানদারদের কাছে আল্লাহর সে চাওয়াটা কেমন? ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ইসলামের মধ্যে পরিপূর্ণভাবে দাখিল হও। শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। কেননা শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’
পুরাপুরিভাবে ইসলামের মধ্যে দাখিল হওয়া মানে কী? এর মানে হলো, মুসলমান তার জীবনে যেকোনো জায়গায় যেকোনো সমস্যার সম্মুখীন হবে তার সমাধান কুরআন থেকে নেবে। অন্যভাবে বলা যায়, মুসলমান তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনের সব ক্ষেত্রে ইসলামের তথা কুরআনের বিধিবিধান মান্য করে চলবে। এটাই আল্লাহর চাওয়া মুসলমান তথা ঈমানদারদের কাছে। মাওলার এমন চাওয়া যারা পূরণ করতে পারবে তারাই জান্নাতে যাবে, ব্যতিক্রমকারী নয়। আর মুসলমান এ কাজে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করবে সর্বশেষ নবী, দুনিয়াবাসী সবার নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবন চরিতকে। নবী সা:-এর জীবন চরিতই ছিল ওপরে বর্ণিত মুসলমানের চরিত্রের অনুরূপ- রাতে আল্লাহর দরবারে যাঁর কাকুুতি-মিনতি-যাচনায় কান্নার রোল তাঁর পবিত্র গণ্ডদেশ ভাসিয়েছে, দিনে তাঁর অনন্যসাধারণ সেনাপতিত্বে কাফিরদের তখতেতাউস খানখান করেছে। রাতের শেষ প্রান্তে যে নবী তাঁর প্রভুর দরবারে আহাজারি আর রোনাজারিতে আকাশ-বাতাস স্তব্ধ করেছেন; দিনের বেলা সেই নবী সা:ই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সংস্কারে জীবন উৎসর্গ করেছেন। রাষ্ট্রের অর্থব্যবস্থা কেমন করে চলবে তা-ও দেখিয়েছেন তিনি। একেবারে পুরাপুরি কুরআনিক চাহিদার বাস্তবায়ন ছিল তাঁর জীবন। আল্লাহ ঠিক যেভাবে চেয়েছেন। তাই তো আমাদের নবীজী সা:-এর জীবনকে জীবন্ত কুরআন বলা হয়। খেলাফতে রাশেদার যুগ পর্যন্ত সাহাবাদের জীবনে নবীজীর জীবনের এ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুসরণ হয়েছে। তারপর থেকেই মুসলমানের জীবনে শুরু হয় নৈতিক স্খলন। সৃষ্টি হয় বিভিন্ন রকমের আজগুবি সব পথ-মতের। কেউ শুধু রাতের দরবেশি জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল, অন্য দিকে কেউ আবার দিনের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ততায় রাতে মাওলার কাছে রোনাজারি আর আহাজারির কথা বেমালুম ভুলে বসল। যে চরিত্রবৈশিষ্ট্যের সমাহার থাকার কথা ছিল একই মুসলমান ব্যক্তির মধ্যে তা আলাদাভাবে ভিন্নজন, ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে অবস্থান করতে লাগল। অঙ্গহানি ঘটল মুসলিম চরিত্রের। ফল হলো এইÑ কুরআনিক এবং শেষ নবী মুহাম্মদ সা:-এর উম্মত মুসলমান দুনিয়া থেকে নির্বাসনে চলে গেল। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আজ দুনিয়াময় মুসলমান নামধারী এক বিরাট জাতিগোষ্ঠী যা দেখছি আমরা তা কুরআন আর সুন্নাহ বিবর্জিত, এক ইসলামের ভেতরে নানা রকম উদ্ভটসব ফের্কাধারী একেক ননইসলামিক গোষ্ঠী, যারা ইহজীবনে সব তুষের আগুনে জ্বলছে, হয়তো পরকালীন জীবনেও জাহান্নাম ছাড়া তাদের গতি নেই। কেননা এ ক্ষেত্রে আল্লাহর বাণী- ‘তবে কি তোমরা কিতাবের এক অংশ বিশ্বাস করো অপর অংশকে করো অবিশ্বাস? জেনে রাখো তোমাদের মধ্যে যাদেরই এমন আচরণ হবে তাদের এতদ্ব্যতীত আর কী শাস্তি হতে পারে যে, তারা পার্থিব জীবনে অপমানিত আর লাঞ্ছিত হতে থাকবে এবং পরকালে তাদের কঠোর শাস্তির দিকে নিক্ষেপ করা হবে। (সূরা বাকারা : ৮৫,৮৬)।’ আসুন আমরা জীবন্ত কুরআন নবী সা:-এর পুরাপুরি অনুসরণের মাধ্যমে কুরআনিক মুসলমান হই।
- See more at: http://islamicnews24.net/110071-2/#sthash.qrVKNNNn.dpuf

Related

islamic story 5289234180543213345

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রিয় পাঠক! যদি পোস্টটি পড়ে আপনার ভালো লেগে থাকে, অথবা পোস্টটিতে আপনার সমস্যা থেকে থাকে তবে একটি গঠনমূলক মন্তব্য করার অনুরোধ করছি । কারন আপনার একটি ভালো মন্তব্য লেখককে আরো ভালো পোস্ট লেখার অনুপ্রেরণা যোগাবে। আশাকরি এমন কোন মন্তব্য করবেন না, যা পড়লে লেখকের কাছে খারাপ লাগতে পারে । সাথেই থাকুন ধন্যবাদ....

মনে রাখবেন: এই ব্লগের কোনও সদস্যই কোনও মন্তব্য পোস্ট করতে পারে৷

emo-but-icon

পেজে লাইক দিন l

ভিজিট করেছেন

item